বিশ্ববিদ্যালয় ও শিল্পের মধ্যে সহযোগিতা বৃদ্ধিতে গুরত্বারোপ ইউজিসি’র
দেশে মধ্যম সারির ব্যবস্থাপক ও দক্ষ জনবল তৈরির লক্ষ্যে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর সাথে শিল্প ও বাণিজ্য প্রতিষ্ঠানগুলোর সহযোগিতার সম্পর্ক জোরদারে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ করতে সংশ্লিষ্ট সকলের প্রতি আহবান জানিয়েছে বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশন। এক্ষেত্রে শীঘ্রই অংশীজনদের আলোচনার মাধ্যমে একটি একটি পলিসি পেপার তৈরির করা হবে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের চেয়ারম্যান (অতিরিক্ত দায়িত্ব) প্রফেসর ড. মুহাম্মদ আলমগীর।
ইউজিসি চেয়ারম্যান (অতিরিক্ত দায়িত্ব) প্রফেসর ড. মুহাম্মদ আলমগীরের সভাপতিত্বে সরকারি-বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের সমন্বয়ে বাজার চাহিদার প্রতি লক্ষ্য রেখে দেশে মধ্যম সারির ব্যবস্থাপক তৈরি সংক্রান্ত সভায় এ সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। ইউজিসিতে রবিবার (১০ মার্চ) এ সভা অনুষ্ঠিত হয়।
সভায় ইউজিসি সদস্য প্রফেসর ড. মো. আবু তাহের সংশিালষ্ট বিষয়ে তথ্য-উপাত্ত তুলে ধরেন। সভায় বাংলাদেশ হাইটেক পার্ক কর্তৃপক্ষের ব্যবস্থাপনা পরিচালক জি এস এম জাফর উল্লাহ, ঢাকা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. এম হাবিবুর রহমান, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. গোলাম সাব্বির সাত্তার, বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. এমদাদুল হক চৌধুরী, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. ফরিদ উদ্দিন আহমদ, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ডা. মো. শারফুদ্দিন আহমেদ, বাংলাদেশ টেক্সটাইল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. শাহ আলিমুজ্জামান, বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর ড. সৈয়দ মিথুন আলী, নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ প্রফেসর আব্দুর রব খান, বাংলাদেশ কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান মো. আলী আকবর খান, বাংলাদেশ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় সমিতির ভাইস-চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. আব্দুল মান্নান চৌধুরী, বাংলাদেশ শিল্প ও বণিক সমিতির সভাপতি মাহবুবুল আলম, কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের যুগ্ম সচিব মো. সারওয়ার হোসেন এবং বিজিএমইএর সিনিয়র সহকারী সচিব রাশেদুল ইসলাম অংশগ্রহণ করেন।
প্রফেসর আলমগীর বলেন, বাংলাদেশে ব্লেন্ডেড শিক্ষা পদ্ধতি বাস্তবায়ন এবং বাজারভিত্তিক দক্ষতা উন্নয়ন ও কর্মসংস্থান নিশ্চিতকরণ বিষয়ে জাতীয় টাস্কফোর্স গঠন করা হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের শ্রমবাজারের উপযোগী করে গড়ে তুলতে দেশের শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলো বলিষ্ঠ ভূমিকা রাখতে পারেন। এক্ষেত্রে তারা জাপানসহ উন্নত দেশের দৃষ্টান্ত অনুসরণ করতে পারে।
তিনি আরও বলেন, যুগের চাহিানুসারে দক্ষ মানবসম্পদ তৈরি করা না গেলে বিদেশি কর্মীদের কাজ করার সুযোগ রোধ করা যাবে না। মেধা পাচার ঠেকাতে তিনি মেধাবী ও তরুণদের দেশের উন্নয়ন ও দেশপ্রেমে কাজ করার আহ্বান জানান।
প্রফেসর আবু তাহের বলেন, প্রতিবছরে প্রায় ২০ লক্ষ মানুষ চাকরির বাজারে প্রবেশ করছে। ডেমোগ্রাফিক ডিভিডেন্ডের সর্বোচ্চ সুবিধা পেতে হলে এসব জনগোষ্ঠীর উপযুক্ত শিক্ষা ও প্রশিক্ষণের মাধ্যমে দক্ষ করে গড়ে তুলতে হবে।
টিআইবি প্রতিবেদনের তথ্য উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, দেশের ১.১৫ কোটির বেশি শ্রমিক বছরে ২০-২২ বিলিয়ন বৈদিশিক মুদ্রা আয় করছে। অন্যদিকে, মাত্র ২.৫ লক্ষ বিদেশী কর্মী ৪.৫ বিলিয়ন ডলার দেশ থেকে নিয়ে যাচ্ছে। বাজারের চাহিদা অনুযায়ী দক্ষ মানবসম্পদ গড়ে তোলা না গেলে অর্থের বহিঃপ্রবাহ রোধ করা যাবে না। তিনি দেশের ৭.৩ কোটি কর্মক্ষম জনবলের দক্ষতা উন্নয়নে ১৪ টি প্রতিষ্ঠানকে জাতীয় স্বার্থে একসাথে কাজ করার আহ্বান জানান।
সভায় মধ্যম সারির ব্যবস্থাপক ও দক্ষ জনবল তৈরির লক্ষ্যে একটি নীতিমালা প্রণয়ন ও বাস্তবায়নে কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ, যোগ্য শিক্ষক নিয়োগ, শিল্প ও বাণিজ্য প্রতিষ্ঠানের মধ্যে সহযোগিতা বৃদ্ধি, ভাষা দক্ষতা, ইন্টার্নশিপ ও ট্রেড কোর্স বাধ্যতামূলকভাবে চালু করা, দক্ষতার ধরণ পরিবর্তন, সফট স্কিলস বৃদ্ধি করা, ল্যাব সুবিধা বৃদ্ধি ও জব ফেয়ার আয়োজনের করার সুপারিশ করা হয়। এছাড়াও, সভায় চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় উচ্চশিক্ষা কারিকুলাম যুগপোযোগী করা এবং কারিকুলাম প্রণয়নে শিল্প প্রতিষ্ঠানের সংশ্লিষ্ট ব্যাক্তিদের যুক্ত করার পরামর্শ দেওয়া হয়।
এছাড়া, সভায় বিসিএসের কারণে শিক্ষার্থীদের বিষয়ভিত্তিক পড়াশোনায় কম গুরুত্ব দেওয়ার বিষয়টিও আলোচিত হয়। কয়েকজন উপাচার্য বলেন, বিসিএসমুখী পড়াশোনার কারণে শিক্ষার্থীরা মাত্র ৬টি বিষয়ে বেশি গুরুত্ব দিয়ে পড়াশোনা করেন। এতে করে তারা বিষয়ভিত্তিক পড়াশোনায় যথাযথ মনোযোগ দিতে ব্যর্থ হয়। ফলে উচ্চশিক্ষার কাঙিক্ষত লক্ষ্য অর্জিত হচ্ছে না। এজন্য তারা বিসিএস পরীক্ষার ধরণ পরিবর্তনে পিএসসি’র সাথে আলোচনা করার জন্য ইউজিসিকে পরামর্শ দেন।